নৌবাহিনী আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী

সমুদ্রের তেল-গ্যাস উত্তোলনে বিদেশী বিনিয়োগ প্রয়োজন

Passenger Voice    |    ১১:৩৪ এএম, ২০২৪-০২-২৪


সমুদ্রের তেল-গ্যাস উত্তোলনে বিদেশী বিনিয়োগ প্রয়োজন

সমুদ্রের তেল-গ্যাস উত্তোলনের জন্য বিদেশী বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, ‘আমরা চাই আমাদের দেশ আরো এগিয়ে যাবে, সেজন্য যথাযথ বিনিয়োগ প্রয়োজন। আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারী যারা বিভিন্ন দেশে বিনিয়োগ করেন তাদের আহ্বান জানাব আমাদের সমুদ্রের তেল-গ্যাস উত্তোলনের জন্য। আমরা এরই মধ্যে আলোচনা করেছি এবং আন্তর্জাতিক টেন্ডারও দিয়েছি। আমরা যেন এগুলো ভালোভাবে উত্তোলন করতে পারি, অর্থনীতিতে কাজে লাগাতে পারি।’ বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে গতকাল বাংলাদেশ নৌ-বাহিনী আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন তিনি। ‘‌দ্য টেরিটোরিয়াল ওয়াটারস অ্যান্ড মেরিটাইম জোন অ্যাক্ট-১৯৭৪’-এর সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে এর আয়োজন করা হয়। 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা কারো সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত হব না। স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষা করার মতো সক্ষমতা আমাদের থাকতে হবে। পাশাপাশি আমাদের দেশ স্বাধীন দেশ। স্বাধীন দেশে যা প্রয়োজন আমরা সেটা করে যাব। সেভাবে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের সুবিশাল জলরাশির নিরাপত্তার জন্য নৌবাহিনীর দায়িত্ব গুরুত্বপূর্ণ। সেটা তারা যথাযথভাবে পালন করে যাচ্ছে। নৌবাহিনীকে আমি ত্রিমাত্রিক বাহিনীতে উন্নীত করেছি। আসলে সব বাহিনীকেই আমি উন্নত করেছি। ভৌগোলিকভাবে ছোট দেশ হলেও জনসংখ্যার দিক থেকে আমরা ছোট না। তাছাড়া জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে আমরা অবদান রাখছি। সেখানে যারা কর্তব্য পালন করতে যাবে, তারা সব দিক থেকে দক্ষ হোক সেটা আমি চাই। প্রশিক্ষণটা বড় দরকার।’ 

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের এরই মধ্যে চারটি মিলিটারি একাডেমি করা হয়েছে। পরিকল্পনা আছে প্রত্যেকটা বিভাগে মিলিটারি একাডেমি প্রতিষ্ঠা করে দেব। সমুদ্রে ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য লোক দরকার। আমরা দক্ষ জনশক্তি তৈরির উদ্যোগ নিয়েছি। আরো দক্ষ জনশক্তি যেন হয় সে উদ্যোগটা আমরা নেব। আমাদের সমুদ্রের যে সম্পদ রয়েছে, মৎস্যসম্পদ বা সামুদ্রিক অন্যান্য উদ্ভিদ, বিশেষ করে আমাদের খনিজ সম্পদ, তেল, গ্যাস উত্তোলন, সমস্ত কাজ আমাদের করতে হবে, যেটা আমাদের দেশের জন্য প্রয়োজন। এগুলোর নিরাপত্তার জন্য আমাদের নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ডকে শক্তিশালী করে দিচ্ছি।’ 

সরকারপ্রধান বলেন, ‘আজকের সেমিনারে যারা সম্পৃক্ত, বক্তব্য দেবেন বা পরামর্শ দেবেন, যারা বিদেশী অতিথি এসেছেন, আমি তাদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই। সবাইকে আহ্বান করব, আপনারা আসুন, বাংলাদেশে বিনিয়োগ করুন। আমাদের ভৌগোলিক অবস্থানে যারা বিনিয়োগ করবেন তারা লাভবান হবেন। ব্যবসা-বাণিজ্যের অপার সম্ভাবনা সৃষ্টি হবে। আমাদের লক্ষ্য ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলব।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের আছে তরুণ সমাজ, তারা অত্যন্ত মেধাবী। তাদের যদি আমরা ভালোভাবে শিক্ষা দিয়ে তৈরি করতে পারি, বাংলাদেশ আর পেছনে ফিরে তাকাবে না। আমরা পেছনের দিকে ফিরে তাকাতে চাই না। আমরা এগিয়ে যাব বীরদর্পে, একাত্তরে যেভাবে বিজয় অর্জন করেছি।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশের সমুদ্রসীমা নির্ধারণের জন্য ১৯৭৫ সালের পরবর্তী সরকারগুলো কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। জাতির পিতা যেখানে রেখে গিয়েছিলেন সেখানেই পড়ে ছিল। বাংলাদেশের বিশাল সমুদ্রসীমা যে রয়েছে, সেখানে আমাদের কোনো অধিকার ছিল না। ১৯৭৫ সালে জাতির পিতাকে হত্যা করে সংবিধান লঙ্ঘন করে যারা ক্ষমতায় এসেছিল ২১টা বছর তারা সমুদ্রসীমার অধিকার নিয়ে কেউ কোনো কথা বলেনি।’ শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের স্থলসীমানার চুক্তি বঙ্গবন্ধু করে গিয়েছিলেন। তিনি ভারতের সঙ্গে চুক্তি করেন। সেই সঙ্গে সংবিধান সংশোধন করে চুক্তি বাস্তবায়ন করেন। পরবর্তীতে সেটা কার্যকর করা হয়নি। ২১ বছর পর আমরা যখন সরকারি আসি, তখন এ বিষয়গুলো নিয়ে কাজ শুরু করি। তখন কাজগুলো খুব গোপনীয়তার সঙ্গে শুরু করতে হয়েছিল।’ 

তিনি বলেন, ‘২০১২ ও ২০১৪ সালে মিয়ানমার ও ভারতের সঙ্গে সমুদ্রসীমার নিষ্পত্তি করি। আওয়ামী লীগ সরকার অত্যন্ত প্রচেষ্টার মাধ্যমে সমুদ্রসীমা নির্ধারণ করে। আজকে আমাদের বিশাল সমুদ্রসীমার অধিকার রয়েছে। আমরা সম্ভাবনাময় একটা বিশাল অর্থনৈতিক এলাকা পেয়েছি, যে এলাকা আমাদের অর্থনীতিতে অনেক অবদান রাখতে পারবে।’ 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘একটা কথা আমাদের সবসময় মনে রাখতে হবে এ অঞ্চলটা কিন্তু খুব নিরাপদ। এখানে কারো সঙ্গে কোনো দ্বন্দ্ব নেই। সেই প্রাচীনকাল থেকে ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য এ অঞ্চলটা খুব গুরুত্বপূর্ণ সামুদ্রিক পথ। এ পথ আমাদের সব দেশ সমানভাবে ব্যবহার করছে এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্য চলছে। কোনো রকম দ্বন্দ্ব এ অঞ্চলে তৈরি হয়নি।’ 

অনুষ্ঠানে নৌপরিহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী ও নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল এম নাজমুল হাসান বক্তব্য রাখেন। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সামুদ্রিক বিষয়ক ইউনিটের সচিব রিয়ার অ্যাডমিরাল (অব.) মো. খুরশেদ আলম। 

এদিকে মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা উপলক্ষে গতকাল বিকালে তেজগাঁওয়ে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে এক আলোচনা সভায় অংশ নেন প্রধানমন্ত্রী। সেখানে দেয়া বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে মুছে ফেলা হয়েছিল। কিন্তু এখন তা মুছতে পারবে না।’ 

ভাষা আন্দোলনে বঙ্গবন্ধুর অবদানের তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে বিরূপ পরিস্থিতিতে পড়ার অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের বিরুদ্ধে ১৯৫৮ সাল থেকেই পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা রিপোর্ট করত।৷ আমি ’৯৬ সালে সরকার গঠন করে এসবি অফিস থেকে সমস্ত ফাইল সংগ্রহ করি। আমার সঙ্গে ছিল বেবী মওদুদ। দুজনে মিলে ফাইলগুলো পড়ি। ভাষা আন্দোলনে তিনি কী কী কাজ করেছেন, তা কিন্তু স্পষ্ট হয়েছে। প্রথম খণ্ডেই অনেক তথ্য পাবেন। রিপোর্টগুলো যেহেতু বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে, এটা তো কেউ অস্বীকার করতে পারবে না।’ 

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি যখনই তথ্যগুলো নিয়ে একবার বক্তব্য দিলাম, আমাদের দেশের একজন লেখক (বদরুদ্দীন উমর), যারা বাবার ভাষা আন্দোলন ও তার অবদান নিয়ে লেখেন, তিনি আমার ওপর ক্ষেপে গিয়ে আমার বিরুদ্ধে লিখলেন। আমি নাকি এসব তথ্য বানিয়ে লিখেছি। আমি আর বেবী মওদুদ তথ্যগুলো নিয়ে এমআর আক্তার মুকুল ভাইয়ের বাসায় যাই। আমরা তো চুনোপুঁটি, আমরা লিখলে হবে না। তাই মুকুল ভাইকে বললাম, আপনি লিখবেন, আপনি জবাব দেবেন। উনি লিখলেন, তারপর আর কোনো কথা নেই।’ 

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘ইতিহাসকে বিকৃত করা এবং বঙ্গবন্ধুর অবদানকে অস্বীকার করা, এটা আমাদের দেশের একশ্রেণীর মানুষ করত। এখনো দেখবেন, যা কিছু করেন কোনো কিছু তাদের ভালো লাগে না। ভালো না লাগার গ্রুপই আমাদের বদনাম ছড়ায় সব জায়গায়। তাদের কিছু ভালো লাগে না, এটাই হলো বড় কথা।’ 

তিনি বলেন, ‘আজকে আমরা এখানে সমবেত হয়েছি ভাষাশহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে। বাংলাদেশ ও বাঙালি, আজকে বিশ্বের বুকে যে পরিচয়টা পেয়েছি, সেটা দিয়ে গেছেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। আমরা মাতৃভাষায় কথা বলতে পারছি, আমরা স্বাধীন জাতি হিসেবে মর্যাদা পেয়েছি, এ উপমহাদেশে একমাত্র ভাষাভিত্তিক রাষ্ট্র হচ্ছে বাংলাদেশ। সে জাতিরাষ্ট্র আমরা পেয়েছি।’ 

ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের গণতান্ত্রিক অধিকারসহ সবকিছু অর্জন করতে হয়েছে অনেক আত্মত্যাগের মধ্যে দিয়ে। ’৪৭ সালে করাচিতে একটা শিক্ষা সম্মেলন হয়, সেখানে বলা হয় রাষ্ট্রভাষা হবে উর্দু। সেদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতে গিয়ে প্রতিবাদ জানায়।’ 

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, আব্দুর রাজ্জাক, উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য আতাউর রহমান, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফী, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ বজলুর রহমান, বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক মুহম্মদ নূরুল হুদা, ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি বেনজীর আহমেদ সভায় বক্তব্য রাখেন।

প্যা.ভ/ত